নিদ্রাহীনতা: বাঁচার ১০ টি বিজ্ঞান সম্মত উপায়
  • info.abclearningbd@gmail.com
  • +8801714443345
image

শিক্ষার্থীদের থেকে শুরু করে ছোট বড় সকলেরই সুস্থ থাকতে হলে নিয়মিত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। ঘুমের মাধ্যমে সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয় এবং মন শরীরকে করে তোলে প্রাণবন্ত ও সতেজ। তাই নিয়ম করে প্রতিদিন রাতে থেকে ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

কিন্তু বর্তমানে অনেকেরই মোবাইল ফোনের আশক্তি এবং শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে ঘুমাতে পারেন না। আর সঠিকভাবে না ঘুমানোর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে শারীরিক, মানসিক স্নায়ুবিক বিভিন্ন রোগ।

ঘুমের সমস্যা সাধারণত মাস খানেকের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়, তবে দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা আমাদের জীবনের নানা রকম প্রভাব ফেলতে পারে। এর কারণে মারাত্মক ক্লান্তির সৃষ্টি হতে পারে।

আপনি যদি নিয়মিত ঘুমের সমস্যায় ভোগেন তার মানে হচ্ছে. আপনার ইনসোমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা রয়েছে, ইনসোমনিয়া কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছরও স্থায়ী হতে পারে।

রাতে ঠিক মতো না ঘুমালে সারাদিন ক্লান্তি এবং অস্বস্তিভাব থাকে অথবা ক্লান্তির জন্য দিনের বেলা কোন কাজে মন বসাতে পারছেন না। এ ধরনের বৈশিষ্ট্য যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে, আপনি আসলেই ইনসোমনিয়ায় ভুগছেন। তবে অনেকের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলোর সবগুলো থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা ইনস্টিটিউট এর তথ্য অনুযায়ী, ইনসমোনিয়া যদি তিন মাস বা এরকম সময় স্থায়ী হয় তাহলে তাকে বলে স্বল্পস্থায়ী ইনসোমনিয়া আর তিন মাসের বেশি স্থায়ী হলে সেটাকে বলা হয় দীর্ঘস্থায়ী ইনসোমনিয়া।

এদিকে বিভিন্ন মানুষের ঘুমের চাহিদাও ভিন্ন। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক একজন ব্যক্তির দৈনিক থেকে ঘণ্টা ঘুমের দরকার হয়।

আপনি যদি সারা দিনের ক্লান্তিতে ভুগতে থাকেন তার মানে হচ্ছে আপনি হয়তো পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছেন না। তবে অনেকেই রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছেন না বলে চিন্তিত হয়ে থাকতে পারেন। অনেকের ক্ষেত্রে কম ঘুমও স্বাভাবিক হতে পারে।

কারণ ব্রিটিশ দাতব্য প্রতিষ্ঠান ম্যাকমিলান ক্যান্সার সাপোর্টের ইনসমোনিয়া নিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেকের জন্য রাতে পাঁচ ঘন্টা ঘুমই যথেষ্ট। আবার রাতের শিফটে যারা কাজ করেন বা যাদের ছোট বাচ্চা রয়েছেন তারা হয়তো রাতের বেলা খুব একটা ঘুমানোর সুযোগ পান না। তার মানে এ নয় যে তারা ইনসোমনিয়ায় ভোগছনে।

সাধারণত, এক রাত ঘুম না হলে পরের দিন ক্লান্তি বোধ করা ছাড়া এটি আমাদের খুব একটা প্রভাব ফেলে না। কিন্তু দীর্ঘদিনের নিদ্রাহীনতায় দ্বিধা, উদ্বেগ এবং বিষন্নতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ঘুম নিয়ে চিন্তিত থাকলে চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করুন। 

ইনসোমনিয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে মানসিক চাপ, উদ্বেগ কিংবা বিষন্নতা। সাধারণত ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন এর মাধ্যমে ইনসোমনিয়া দূর করা যায়। এর জন্য যা করতে পারেন তার মধ্যে হচ্ছে-

# প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে জেগে উঠুন।

# ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে থেকে বিশ্রাম নিন অথবা টুকিটাকি কাজ করতে পারেন। যেমন- গোসল করা, বই পড়া ইত্যাদি।

# ঘুমানোর আগে ঘর যাতে অন্ধকার এবং নিরিবিলি হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে ভারী পর্দা এবং ইয়ার প্লাগ ব্যবহার করতে পারেন।

# দিনের বেলা পর্যাপ্ত

 ব্যায়াম করতে হবে। তবে ঘুমাতে যাওয়ার 4 ঘণ্টা আগে থেকে ব্যায়াম করা বন্ধ করতে হবে।

# বিছানার চাদর এবং বালিশ যাতে আরামদায়ক এবং পরিস্কা-পরিচ্ছন্ন হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

# ঘুমের আগে হালকা নাস্তা করা যেতে পারে। আপনি চাইলে হালকা গরম দুধ খেতে পারেন। তবে অবশ্যই আপনার স্নায়ুকে উদ্দীপিত করে এমন কোন উপাদান রয়েছে সেরকম খাবার খাওয়া যাবেনা।

# মানসিক ব্যায়াম করতে পারেন। যাতে আপনার মন দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলতে পারে। যেমন- কোন কবিতার লাইন মনে করার চেষ্টা করতে পারেন। কোন একটি পছন্দের ঘটনার খুঁটিনাটি বিস্তারিত বর্ণনা মনে করার চেষ্টা করুন এগুলো ঘুম আসতে সাহায্য করে।

# ইনসোমনিয়া দূর করতে হলে ঘুমানোর কমপক্ষে ঘণ্টা আগে থেকে অ্যালকোহল, চা-কফি এবং ধূমপান করা যাবে না।

# ঘুমাতে যাওয়ার আগে আগে মোবাইল ফোন বা টেলিভিশন দেখা বন্ধ করতে হবে। কারণ এগুলোর রেডিয়েশন আপনাকে আরো জেগে থাকতে উদ্বুদ্ধ করবে।

তবে আপনি যদি দেখেন যে, আপনার ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন করেও কোন লাভ হচ্ছে না। কয়েক মাস ধরে ঘুমের সমস্যা হচ্ছে এবং নিদ্রাহীনতার কারণে আপনার প্রাত্যহিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে। তাহলে অবশ্যই আপনাকে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় অনেকেই ঘুম না হলে ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ কিনে খেয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে- চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ঘুমের ওষুধ খাওয়া উচিত নয়। কারণ আপনি যদি মারাত্মক ধরনের ইনসোমনিয়ায় ভোগেন এবং অন্য কোনো চিকিৎসা আপনার জন্য কাজ না করে শুধুমাত্র তখনই একজন চিকিৎসক আপনাকে ঘুমের ওষুধ খেতে বলবেন।


মতামতসমূহ